অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও আত্মদানের ভিতর দিয়ে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশ। আজ তার নির্মাণের পর্ব। এই নির্মাণকে অর্থময় করার জন্যে আজ দেশে চাই অনেক সম্পন্ন মানুষ; সেইসব মানুষ যারা উচ্চ-মূল্যবোধসম্পন্ন, আলোকিত, উদার, শক্তিমান ও কার্যকর- যারা জাতীয়-জীবনের বিভিন্ন অঙ্গনে শক্তিমান নেতৃত্ব দিয়ে এই জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে পারবে। তাদের আজ পেতে হবে আমাদের বিপুল সংখ্যায়- সারা দেশে, সবখানে। এককে-দশকে নয়; সহস্রে, লক্ষে। আর কেবল সংখ্যায় পেলেই চলবে না- তাদের পেতে হবে একত্রিত ও সমবেত আয়োজনে। তাদের গ্রথিত করতে হবে শক্তিশালী সংঘবদ্ধতায়, উত্থান ঘটাতে হবে জাতীয় শক্তি হিশেবে।
জাতীয় জীবনে উচ্চায়ত চৈতন্য ও আলোকের পদপাত আজ ঘটাতেই হবে আমাদের যদি একটি বড় দেশ আর বড় জাতি গড়ার কথা আমরা ভাবি। ক্ষুদ্র মানুষ আর বড় জাতি একসঙ্গে হতে পারে না। কিন্তু একটি জাতির বৈষয়িক প্রবৃদ্ধির মতো তার চিত্তের সমৃদ্ধি রাতারাতি ঘটানোর কোনো পথ নেই। আত্মিক বিকাশের গতি চিরকাল মন্থর দীর্ঘমেয়াদি ও রহস্যময়। মানবজীবনের চেতন-অবচেতনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও অসংখ্য ছায়াঢাকা অনুষঙ্গের অন্ধকার পথে তার যাত্রা। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আজকের স্বপ্ন, চেষ্টা ও আয়োজনের পথ ধরে আগামীতে যদি দেশের সবখানে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রদীপের মতো উজ্জ্বল, বুদ্ধিদীপ্ত, আলোকিত সন্তানেরা জন্ম নিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারে, তবে, অনেক পরে, একদিন, ওইসব মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন, উদার ও প্রগতিশীল মানুষের উৎকর্ষমণ্ডিত বেদনাবান হৃদয়, নিজ-নিজ কর্মজীবনের বিচিত্র উদ্যোগ ও নির্মাণের ভেতর দিয়ে যে-দেশ ও জাতিকে রচনা করবে তা সমৃদ্ধতর হবে বলেই আমাদের আশা।
সারা দেশের সবখানে পর্যাপ্ত সংখ্যায় এইসব আলোকিত, কার্যকর ও উচ্চমূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করা, জাতীয় শক্তি হিশেবে তাদের সংঘবদ্ধ ও সমুন্নত করা এবং এরই পাশাপাশি দেশের মানুষের চিত্তের সামগ্রিক আলোকায়ন ঘটানো বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য।